বাড়ির বিদ্যুতের বিল নির্ধারণের পদ্ধতি সম্পূর্ণ বদলে যাচ্ছে। ডে অ্যান্ড নাইট ডাইভার্সিফায়েড পদ্ধতিতে আগামী দিনে বিদ্যুতের বিল নির্ধারণ হবে। অর্থাৎ দিনের বেলায় বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচ কমে যাবে, আর সন্ধ্যের অন্ধকার নামলেই ইউনিট প্রতি খরচ বেড়ে যাবে।
কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী দিনে দিনের বেলায় ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ২০% কমিয়ে ফেলা হবে। এই সময় যেহেতু বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকে তাই এমন সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে সন্ধ্যের অন্ধকার নামলেই বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেই সময় মানুষকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম ২০% বাড়ানো হবে!
একটা ব্যাপার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের এই নিয়মের ফলে আপনার মাসিক বিদ্যুতের খরচ বর্তমান সময়ের থেকে বাড়তে চলেছে। কারণ দিনের বেলায় বহু বাড়িতে টিউবলাইট বা অন্য কোনও বৈদ্যুতিন আলো জ্বালার দরকার পড়ে না। কিন্তু সূর্য অস্ত গেলেই বাড়িতে বৈদ্যুতিন আলো জ্বালা ছাড়া দেখার কোনও উপায় নেই।
তাছাড়া এদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনও সন্ধ্যেবেলাতেই অফিস বা কলকারখানার কাজ করে বাড়ি ফেরেন। ফলে সেই সময় টিভি চালিয়ে খবর দেখা বা বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান দেখতে থাকেন। তারা তাছাড়া রাতে ভালো ঘুমানোর জন্য অনেকেই এসি চালান, অতিরিক্ত ফ্যানও চালায় কেউ কেউ।
সব মিলিয়ে দিনের বেলা থেকে রাতে বিদ্যুতের খরচ বেশি হয়। স্বাভাবিকভাবে দিনের বেলায় বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মাসুল ২০% কমার সুযোগ বিশেষ একটা পাওয়া যাবে না। বরং রাতে ইউনিট প্রতি মাশুল বাড়ার কারণে বিদ্যুৎ খরচ বর্তমান সময়ের থেকে বেড়ে যাবে। মাথায় রাখবেন দিনের বেলায় স্ট্যান্ডার্ড রেটের থেকে বিদ্যুতের খরচ যেমন ২০% কমে যাবে তেমনই রাতে স্ট্যান্ডার্ড রেটের থেকে বিদ্যুতের খরচ ২০% বাড়বে।
কেন্দ্রীয় সরকারের এমন একটা সিদ্ধান্তকে অনেকেই জনবিরোধী বলে দেগে দেবেন। কারণ এতে যে আমজনতার ব্যাপক সমস্যা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু কেন্দ্রের এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কতগুলি বৈজ্ঞানিক কারণ আছে।
এই পৃথিবীকে বাঁচাতে, পরিবেশকে রক্ষা করতে বিজ্ঞানীরা বারবার কার্বন নির্গমন কমানোর কথা বলছেন। তাঁরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে। বিশেষজ্ঞদের এই পরামর্শ মেনে বিশ্বের প্রতিটি দেশ অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে তারা যত দ্রুত সম্ভব জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধ করবে। এই বিশ্বকে বাঁচাতে ভারতবর্ষ’ও সেই অঙ্গীকারে আবদ্ধ।
জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমানো এবং তাতে মানুষকে নিরুৎসাহিত করতে বিদ্যুতের খরচ দিনেরবেলা একরকম এবং রাতে তার থেকে বেশি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর কারণ হল, দিনের সৌর বিদ্যুৎ অনেক বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়। তার ইউনিট প্রতি দামও কম।
এদিকে এই সৌর বিদ্যুৎ পুরোপুরি পরিবেশ বান্ধব। সেই কারণেই সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারে মানুষকে আরও বেশি করে উৎসাহী করে তুলতে দিনের বেলায় বিদ্যুতের খরচ বর্তমান সময়ের থেকে ২০% কমিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। আবার সূর্য অস্ত যাওয়ার পর সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার কমে যায়। তখন চিরাচরিত কয়লা থেকে উৎপন্ন তাপ বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। যা জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা থেকে উৎপন্ন হয়। আমজনতা যাতে তাপ বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরুৎসাহিত বোধ করে সেই কারণেই সন্ধ্যের পর বর্তমান সময়ের থেকে বিদ্যুতের মাশুল ২০% বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের ভাবনা হল, রাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার বেশি করলে বেশি টাকা দিতে হবে, এই বিষয়টি বুঝতে পারলেই বিদ্যুতের অপচয় অনেকটা কম হবে। তাতে ধীরে ধীরে তাপ বিদ্যুতের ব্যবহার কমবে। কেন্দ্রীয় সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ৬৫ শতাংশ কমিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুতের মাশুলের হেরফেরের এই বিষয়টি তারই অংশ। কেন্দ্রের লক্ষ্য হল ২০৭০ সালের মধ্যে ভারতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শূন্যে নিয়ে যাওয়া।
পরিবেশকে বাঁচাতে কেন্দ্রীয় সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এর বিরোধিতার অর্থ হয় না। তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে আর্থিকভাবে যারা দুর্বল শ্রেণির অন্তর্গত তাদের জীবনযন্ত্রণা যে বাড়বে সেটা বলাই বাহুল্য। তবে এক্ষুণি আপনাকে বিপদে পড়তে হচ্ছে না।
২০২৪ সালের ১ এপ্রিল থেকে শিল্পক্ষেত্রে দিনেরবেলায় একরকম বিদ্যুতের মাশুল এবং রাতে তার থেকে বেশি মাশুলের এই নিয়ম চালু হবে। ২০২৫ সালের ১ এপ্রিল থেকে গৃহস্থ বাড়িতেও এই নিয়ম লাগু হবে। অর্থাৎ আমজনতাকেও বিদ্যুৎ মশুলের হেরফেরের এই নিয়মেও অন্তর্গত হতে হবে। কেবলমাত্র কৃষি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মাশুলের বৃদ্ধি ঘটানো হবে না।
0 Response to "বদল হচ্ছে বিদুৎতের বিলের নিয়ম, এখন থেকে দিন ও রাতের জন্য বিদ্যুতের খরচা হবে দু রকমের। "
Post a Comment
If you have any doubts, please let me know